নিজস্ব প্রতিবেদক।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের এক টেকনোলজিস্টকে বেধরক মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিডিএস কোর্সের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে। আহতের নাম মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি ডেন্টাল বিভাগের টেকনোলজিস্ট। গত বুধবার দুপুরে হাসপাতালের বহির্বিভাগের এক্সোডনশিয়া কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। আহত সাইফুল ইসলাম বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হামলায় তার মাথায় ও নাকসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সাইফুল।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাইফুলের মাধায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার নাকে তিনটি সেলাই করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাইফুল ইসলামের আরও দুই সহকর্মী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) রুবাইয়াত হক ও সজিত চন্দ্র দেবনাথ আহত হয়েছেন। আহতদের অভিযোগ হামলায় আহত হলেও জরুরি বিভাগের ব্যবস্থাপত্রে পুলিশ কেস না দিয়ে সিল দেওয়া হয়েছে দুর্ঘটনায় আহত! এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী সাইফুল।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, এমন একটি লিখিত অভিযোগ আমি বৃহস্পতিবার পেয়েছি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি হামলার প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের রুম প্রয়োজন হলে আমাকে জানানোর কথা। কিন্তু হাসপাতালে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা দুঃখজনক বলে তিনি জানান।
আহত সাইফুল জানান, দীর্ঘদিন যাবত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের ডেন্টাল বিভাগের একটি রুম দখল নেওয়ার পায়তারা করে আসছিল ডা. বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসসহ কয়েকজন। রুমটি দখলে নিতে না পারায় মঙ্গলবার টেকনোলজিস্ট বিভাগে এসে বকাঝকাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে যায়।
ম্যাক্সিলোফেশিয়াল সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীনের নির্দেশে এবং ডা. বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস এর সরাসরি মদদে ডা. নায়িম, ডা. সগির, ডা. সাফোয়ান এবং ডা. জাবেদের নেতৃত্ব বিডিএস ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অন্তত ৪০/৫০ জনের একটি দল রুম আটকে দিয়ে টেকনোলজিস্টদের মারধর শুরু করে।
হামলায় লাথি, কিল, ঘুষি, ও মাথায় লোহার চেয়ার দিয়ে হামলা, নাক, মুখসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত পান তিনি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে উদ্ধার করে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন। ব্যবস্থা পত্রে সিল দেওয়া হয় দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়েছেন তিনি। বাসায় ফেরার পর তার অবস্থা অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান তিনি। এরপর ঢামেকে হাসপাতালে সিটিস্ক্রিন করানোর পর চিকিৎসকরা জানান, তার মাথায় রক্তক্ষরণ হয়েছে।
সাইফুল আরও জানান, রক্তক্ষরণের পরও হামলাকারীরা তাকে ঘার ধরে নিয়ে যায় সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নাসির উদ্দিনের রুমে। সেখানে ডেন্টাল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম এবং ডা. বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই আমাকে ও তার দুই সহকর্মীকে জোরপূর্বক বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাসের পা ছুঁয়ে মাফ চাওয়ানো হয়। তিনি বলেন, আমি পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা না নিলে আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক অধিভূক্ত ও নিবন্ধিত ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ডেন্টাল টেকনোলজি কোর্সে এস.এস.সি/এইচ.এস.সি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ অনেক মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীরা দেশের সরকারী ৯টি প্রতিষ্ঠানে ৪৪৫জন এবং বেসরকারী ১০৩টি প্রতিষ্ঠানে ১৯৬৮ জন সর্বমোট ২৪১৩ জন প্রতি বছর ভর্তি হয়ে পড়াশুনা করে আসছেন। এ রকম প্রায় ১০ (দশ) হাজার ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট বাস্তবমূখী ও যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণ করে সম্মান জনক ক্যারিয়ার গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে পড়াশুনা করেছেন । উক্ত কোর্স সম্পন্নকারী সারা দেশের বিপুল সংখ্যক সুদক্ষ ও সুপ্রশিক্ষিত ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) দের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘বাংলাদেশ ডেন্টাল পরিষদ’।বাংলাদেশ ডেন্টাল পরিষদের মহাসচিব লায়ন মুহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খলার সাথে পরিচালিত হওয়া বাংলাদেশ ডেন্টাল পরিষদের সরকারি চাকুরিজীবী সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগে এক্সোডনশিয়া কক্ষে অন্যান্য দিনের ন্যায় যথারীতি দায়িত্ব পালনকালে হঠাৎ বেলা ১১.৩০থেকে ১২.০০টার সময়কালের মধ্যে বলে বিডিএস কোর্সের ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং ছাত্র সব মিলিয়ে ৪০/৫০জন রোগী বের করে কক্ষের দরজা বন্ধ করে বিনা অপরাধ ও বিনা উস্কানিতে জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম সহ হাসপাতালে সরকারি দায়িত্ব পালনরত অন্যান্য সদস্যদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে করে রক্তাক্ত জখম করে। এতে সারা দেশের সরকারি চাকুরীজীবি সদস্যরা হতভম্ব এবং চরম আতংকিত হয়ে আছে। এমতাবস্থায় আজ মহাখালী আই,পি,এইচ মিলনায়তনে জড়িতদের শাস্তি ও নিরাপদ পেশার দাবীতে সকাল এগারোটায় জরুরি প্রতিবাদ সভা আহবান করা হয়েছে। প্রতিবাদ সভায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে।