জামশেদ আলী:
কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার জারইতলা একটি প্রাচীন ইউনিয়ন। জারইতলার বর্তমান মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭ হাজারের অধিক। এরি মধ্যে ২০২১ সালের বাস্তভিটার জন্য আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, ভুমিহীনের সংখ্যা প্রায় ৬০০। শুধু তাই নয় অত্র এলাকার অনেকের ঘরবাড়ি সহায় সম্পত্তি কিছুই না থাকার কারণে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাধ্য হয়ে শহরকেন্দ্রিকও নিজেকে ঠাঁই করে নিয়েছে।
এই সকল লোকজনের মধ্যে অনেকেরই জমিজমাতো দূরের কথা ঘরবাড়ি পর্যন্ত নেই। বাস্তভিটার জন্য কিভাবে আবেদন করতে হবে, কোথায় আবেদন করতে হবে এর নিয়ম পর্যন্ত তাদের জানা নেই এমনকি অনেকে বাস্তভিটার এই তথ্য সম্পর্কে অবগতও নন।
শুধু যারা এই বিষয়ে অবগত আছে এবং সরকারি সহায়তায় ঘরবাড়ি পাওয়ার আশায় বিভিন্ন মহলে ছোটাছুটি করছেন এমন সচেতন পরিবারের সংখ্যা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬০০ হলেও বাস্তবে আরো অনেক বেশির সম্ভাবনা রয়েছে।
জারইতলা ইউনিয়নের ভূমি অফিসের দায়িত্বে থাকা বিপুল চন্দ্র দেবনাথের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাস্তভিটার যোগ্য ৬২পরিবারকে মূল তালিকায় রাখা হয়েছে তমধ্যে যাচাই-বাছাই করে বর্তমানে মাত্র ৩১টি পরিবারকে তাদের স্থায়ী বসবাসের জন্য ব্যবস্তা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নিকলী থানার সর্বোচ্চ পরিমাণ বাস্তভিটা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে জারইতলা ইউনিয়নে আর নিকলী সদর, সিংপুর ও ছাতির চরে বাসস্থানের উপযুক্ত উন্মুক্ত জমি পাওয়া যায়নি বলে বাস্তভিটা তৈরি করে দেওয়ার সুযোগ মিলেনি। প্রতিটা বাস্তভিটার জন্য বরাদ্দ ২শতাংশ ঘর তৈরির উপযুক্ত জায়গা যার বরাদ্দকৃত মূল্য ধরা হয়েছে ১লক্ষ ৯০ হাজার টাকা আর ঘর তৈরি বাবদ আরো ২লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে মোট বরাদ্দ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪লক্ষ টাকা।
বাস্তভিটা পরিবারের যারা এমন সু্যোগ পেয়েছেন তারা মহাখুশি সরকারকে বাহবা দিচ্ছেন আর যারা প্রকৃতপক্ষে ঘরবাড়ি পাওয়ার দাবিদার সত্বেও সু্যোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের দাবি সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাদের মৌখিক অভিযোগের অন্ত নেই। অনেকই বলছেন এতে অনেক স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। তাদের কাছে এই মৌলিক অধিকার পাওয়ার বিষয়টিকে দুর্লভ কিছু মনে হয়েছে।
আঠার বাড়িয়া গ্রামের বাস্তভিটার জন্য আবেদনকারী প্রয়াত নিয়াশুর স্ত্রী ফেরুজা এবং তার মতো অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন আমারা কেন সাহায্য পাওয়ার প্রকৃত যোগ্য হয়েও পাইনি তা জানিনা!
৭০ উর্ধ্বে অপুত্রা এক বিধবা তার ভাষ্যমতে ক্ষোভের ভাষায় বলেন, শুধু সাজনপুর-আঠারবাড়িয়া গ্রামে আমরা অসহায় নিয়মিত ভিক্ষুক আছি ৪০টি পরিবারের মত আর অন্যের দয়াদাক্ষিণ্য বেঁচে আছে আরো কমপক্ষে অর্ধশতাধিক অসহায় পরিবার। সব মিলিয়ে আমরা আনুমানিক ১০০টির মতো নিঃস্ব অসহায় পরিবার আছি কিন্তু এখানে মাত্র ৩১টি পরিবারকে ঘরবাড়ি দেওয়া হলে কিভাবে বাকীরা পাবে আর আমরা কবে পাব? তবুও তারা অনেকেই ভবিষ্যতে বাস্তভিটা পাওয়ার আশায় স্বপ্ন দেখছেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.