আশরাফুল আলম:
কিশোরগঞ্জ ভৈরব উপজেলায় প্রায় শতাধিক অনুমোদনহীন মশার কয়েল কারখানায় প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে মানহীন কয়েল। এসব কারখানায় মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর কীটনাশক দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মশার কয়েল।বস,মেসি,তীর,বুলেট,ডন,নাইটগার্ড,বর্ডার গার্ড,হরতাল,জিরো,হিরো, পাতাবাহার,তিতাস ইত্যাদি বাহারি নামে মশার কয়েল উৎপাদন হচ্ছে।স্থানীয় কারখানাগুলোর আনুমানিক ১১/১২ টিতে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের ট্রেড মার্ক দিয়ে কয়েল উৎপাদন হলেও বেশির ভাগ কারখানায় চায়নাসহ দেশি বিদেশি তৈরি নামি দামি কয়েল কোম্পানির লেভেল নকল করে বাজারে বিক্রি করছেন তারা। ভৈরবের এসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোন তদারকি বা কোনো মনিটরিং নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে দেখা যায় মশার কয়েল কারখানা শহর এলাকার ঘোরাকান্দা,তাঁতারকান্দি, লক্ষ্মীপুর,কমলপুর,কালিপুর,নাটালের মোড়,ভৈরব আইভী রহমান পৌর স্টেডিয়ামের আশেপাশে,শম্ভুপুর,আমলাপাড়াসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভৈরব এলাকায় ইয়াকুব এন্ড মাহবুব কেমিক্যাল,আবেদীন কেমিক্যাল, মালেক এন্ড কোং, বশির কেমিক্যাল, কিসমত কেমিক্যাল,আরাফাত কেমিক্যাল ওয়ার্কস এছাড়াও কিছু কয়েল কারখানার অনুমোদন রয়েছে।
বস মশার কয়েলের মালিক মোঃফজলুর রহমান দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ মশার কয়েলের কারখানায় চাকরী করার পর এখন বস নামক কয়েল বাজারজাত করছেন বলে জানা যায়।বস কয়েলের অনুমোদন একটি কারখানায় থাকলেও অবৈধভাবে আরো বিভিন্ন কারাখানায় তৈরি হচ্ছে তাদের পণ্য।শুধু বস কয়েল নয় এমন একাধিক কারাখানায় চলছে এমন অবৈধ পদ্ধতিতে কয়েল ফ্যাক্টরি। ভৈরবে হাতেগোনা কয়েকটি কারখানায় সব ধরনের কাগজপত্র থাকলেও কয়েল কারখানায় অনুমোদন জটিল হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীরা অনুমোদন নিতে চান না।
অপর দিকে আরো শতাধিক কারখানা অনুমোদনহীনভাবেই নিম্নমানের রাসায়নিক কীটনাশক দিয়ে প্রতিদিন কয়েল উৎপাদন করে বাজারজাত করা হচ্ছে। ডাক্তারদের মতে এসব নিম্নমানের কয়েল মানুষ দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহার করলে দূষিত ধোঁয়ায় মানবদেহের শ্বাসকষ্টসহ কিডনি, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভৈরবের কোনো কোনো কারখানার মালিক তাদের ব্র্যান্ড বাজারজাত না করে দেশের অন্যান্য কয়েল ব্যবসায়ীদের ব্র্যান্ডের কয়েল উৎপাদন করে সরবরাহ করেন। এ ক্ষেত্রে তারা শুধু মেকিং (তৈরী) চার্জ রেখে নিম্নমানের কয়েল সরবরাহ করে থাকে। সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানায়, কেউ মশার কয়েল কারখানা করতে হলে একাধিক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। তারমধ্যে ঢাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্লান্ট প্রটেকশন শাখা থেকে পিএসপি অনুমোদন অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ অনুমোদনে কয়েলে কত মাত্রায় কীটনাশক দেয়া হবে তাহা উল্লেখ থাকে। বর্তমানে উৎপাদিত কয়েলে এস ভায়োথিন, সুমি-১, ডি এলোথ্রিন, সুমেথ্রিন, এজভাইথিং এ জাতের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কীটনাশকের মান নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। ভৈরবের কারখানাগুলোতে অনুমোদনের বাইরে বেশি মাত্রায় কীটনাশক দিয়ে কয়েল উৎপাদন হয় বলে একাধিক মালিক স্বীকার করেন। কারণ মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক না দিলে মশা মরে না বলে তারা দাবি করেন। কৃষি বিভাগের মতে কয়েল ব্যবহার মশা তাড়াবার জন্য, মারার জন্য নয়।কেউ কয়েল কারখানা করলে পিএসপির অনুমোদন ছাড়াও ফায়ার লাইসেন্স, পৌরসভার অনাপত্তি প্রত্যয়নপত্র, পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন, বিএসটিআই অনুমোদন, বাজারজাত লাইসেন্স, ভ্যাট, আয়কর, ট্রেড লাইসেন্স, ট্রেড মার্ক, এসকল সবকিছুরই অনুমোদন নিতে হয়। ভৈরবের অবৈধ কারখানাগুলো শুধুমাত্র পৌরসভা থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নকল ও নিম্নমানের কয়েল উৎপাদন করে বাজারজাত করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশি বিদেশি ও চায়নার তৈরি নামি দামি কয়েল কোম্পানির কয়েল নকল করে বাজারে বিক্রি করলেও স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ ব্যাপারে নজর নেই।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.