মোঃ নাঈম মিয়া,(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এক নার্সের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্বজনদের দাবি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান নিহতের স্বজনরা।
সোমবার (১১জুলাই) সকালে ভৈরব পৌর শহরের কমলাপুর ঈদগাঁহ মাঠ রোড এলাকায় অবস্থিত ভৈরব ইউনাইটেড হাসপাতাল এন্ড অর্থোপেডিক সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় ২০৩ নাম্বার কক্ষ থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি এই হাসপাতালে বিগত দুই বছর যাবত নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিহত রিমা নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিরিজকান্দি গ্রামের সেন্টু প্রামাণিকের মেয়ে।
রিমার বড়বোন তনিমা প্রামাণিক বলেন, গত বুধবারে হাসপাতালে থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিল। পরে শনিবার দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোনে বাড়ি থেকে সেখানে আসে রিমা। পরে আজ ভোরে হাসপাতাল থেকে ফোন করে তাকে জানানো হয় তার বোন আত্মহত্যা করেছে।আমি এসে তার লাশ ঝুলানো দেখতে পাই নাই। অক্সিজেন লাগিয়ে বেটে শুয়োনো ছিলা বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে তার কাছে।
নিহতের কাকা দিপু প্রামাণিক বলেন, আমার ভাতিজি ফাঁস লাগিয়ে আত হত্যা করেনি। ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলে তার গলায় দাগ থাকতো জিব্বা বের করা থাকতো কিন্তু কোনটাই নেই।আমার ভাতিজি কে বাড়ি থেকে তারা ফোন করে এনেছিল পরিকল্পিত ভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের মা বিচিত্রা পাল অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কান্নাকাটি করায় বাঁধা দেন।
এ ঘটনায় নিহতের ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুর আগে নিহত নার্স রিমা প্রামাণিক একটি চিরকুট লিখে রেখে যান। ওই চিরকুটে নিহতের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে জানাগেছে। ঘটনাস্থল থেকে ওই নার্সের একটি মুঠোফোনও চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। ওই মোবাইলের কললিস্ট ও চিরকুটের সূত্র ধরে সঠিক তদন্ত করা হলে ঘটনার আসল রহস্য বের হতে পারে বলে স্থানীরা ও স্বজনরা ধারণা করছেন।
সরজমিনে গিয়ে জানাগেছে, নিহত রিমা প্রামাণিক ভৈরবের সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছিলো। সে দুই বছর ধরে ইউনাইটেড হাসপাতালে এইড নার্স হিসেবে চাকুরী করতো। সে হাসপাতাল ভবনের ৫ম তলায় স্টাফ কক্ষে থাকতো অন্যান্য স্টাফদের সাথে। ঈদের আগে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের জরুরি ফোন পেয়ে সে ঈদের আগের দিন শনিবার বিকেলে হাসপাতালে আসে বলে জানান নিহতের পরিবার। ওই দিন শনিবার দিবাগত আনুমানিক ৩টার দিকে নার্সদের ইনচার্জ লিজার মাধ্যমে হাসপাতালের এমডি হানিফুর রহমান সুমনে সাথে কথা হয় ওই নার্সের। পরে ঘন্টা খানেক পর ৪টার দিকে এঘটনা ফাঁসিতে ঝুলে মারা গেছে বলে জানা যায়।
ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানায়, ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করি। ফাঁসিতে মৃত্যু হলেও তাকে একই রুমে বেডে শোয়া অবস্থায় পায়। ফ্যানের একটি ওড়না ঝুলানো রয়েছে। নিহতের পাশ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, নিহতের হাতের লেখা কিনা সেটা মিলিয়ে দেখতে হবে। সর্বশেষ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে আত্মাহত্যা নাকি হত্যা।
এ বিষয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হানিফুর রহমান সুমন জানান, নিহত রিমা প্রামাণিক তার হাসপাতালে এইড নার্স হিসেবে ২ বছর যাবৎ কর্মরত। তবে সে পুলিশে চাকরি করবে বলে এখান থেকে চাকরির রিজাইন্ড লেটার দেয় আমি তার রিজাইন লেটার ছিড়ে ফেলে দেয় এবং এখানে চাকরী করতে তাকে বুঝায়। তবে সে মানসিকভাবে একটু চিন্তিত থাকতো। শনিবার তাকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে আনা হয় এবং রোববার রাত ৩ টার দিকে আমাকে ফোন করে জানায় সে চলে যাবে। তবে রাতের বেলায় যদি হাসপাতাল থেকে চলে গিয়ে বিপদে পড়ে। এজন্য সে যেন হাসপাতালেই থাকে তার সহকর্মীর মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করি। রাত ৩ টার দিকে খবর পায় একটি কক্ষে সে ফাসিতে ঝুলছে। খবর পেয়ে আমি বাসা থেকে এসে তাকে হাসপাতালে ডাক্তারের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়। কিন্ত তাকে বাচাঁনো সম্ভব হলো না।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.